মেহেরপুরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য:
দেশের উন্নয়নশীল জেলাগুলোর একটি মেহেরপুর। একসময় ছিল পিছিয়ে থাকা জেলাগুলোর একটি। মেহেরপুরের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। তাই কৃষিতে রয়েছে বৈচিত্র। মেহেরপুরের অর্থনীতিতে উন্নয় ঘটাতে ভূমিকা রাখতে পারে জিআই পণ্য। মেহেরপুরে যেসব পণ্য ভালো উৎপাদন হয় তা জিআই স্বীকৃতি অর্জনের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষ রপ্তানি করার সুযোগ আছে। তাই জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে এসব পণ্যের কদর বাড়ানোর দিকে মনযোগ দেওয়া দরকার। আজকে আলোচনা করবো মেহেরপুরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য নিয়ে।
মেহেরপুরের সম্ভাব্য জিআই সাবিত্রী মিষ্টি
বাংলাদেশের প্রাচীন ও পরিচিত মিষ্টিগুলোর মধ্যে মেহেরপুরের সাবিত্রী মিষ্টি অন্যতম। এই মিষ্টির ইতিহাস দেড়শ বছরের পুরানো। যাত্রা শুরু হয়েছিল বাসুদেব সাহার হাত ধরে। সাবিত্রী মিষ্টির আকৃতি চমচমের মতো হলেও এর রয়েছে ভিন্ন স্বাদ ও আকৃতি। এই মিষ্টির গায়ে খুদাই করে লেখা থাকে তার নাম। যা অন্য মিষ্টির ক্ষেত্রে দেখা যায় না। ইন্টারনেটের কারণে সাবিত্রী মিষ্টি এখন ঢাকাতেও সরবরাহ হয়। সাবিত্রীর স্বাদ কিছুটা নোনতা। এটা সাবিত্রীর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। মূলত খাঁটি দুধ সারাদিন জ্বাল দেওয়ার পর সন্ধ্যায় মিষ্টি উৎপাদন করা হয়। যার ফলে তা কিছুটা নোনতা স্বাদের হয়ে যায়। কারিগরদের মতে এটাই সিবিত্রীর বিশুদ্ধতা প্রমাণের একটা সুযোগ। তবে আরও কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এটি শুকনা মিষ্টি হলেও ভিতরে রসালো, স্বাভাবিক তাপমাত্রায়ও দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্বাদ অটুট থাকে।
বাসুদেব এই সাবিত্রী ব্যবহার করা হতো জমিদার বাড়ির মেহমান আপ্যায়নেও। এই মিষ্টি জিআই স্বীকৃতি পেলে বাজার চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি মেহেরপুরে উৎপাদন সক্ষমতাও বাড়বে।
রসকদম্ব মিষ্টি
বৃটিশ শাসন আমলে উৎপাদন শুরু হয়েছিল রসকদম্ব মিষ্টির। যার স্বাদ ও কোয়ালিটি এখনো একই রয়ে গেছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম টিকে আছে বাসুদেবের তৈরি করা রসকদম্ব মিষ্টি। এর আকৃতি স্বতন্ত্র। সরকদম্বের গায়ের হোমিওপ্যাথি ঔষধের মতো সাদা অংশ মিষ্টির স্বাদকে স্বতন্ত্র করেছে। এছাড়াও ভিতরে রসালো হওয়ার করণে অন্য যেকোন মিষ্টির চেয়ে এর স্বাদ আলাদা। মেহেরপুরের রসকদম্ব মিষ্টির জিআই স্বীকৃতির সময় এসেছে। সম্প্রতি একই নামে পশ্চিম বঙ্গে জিআই পেতে যাচ্ছে মালদহের রসকদম্ব। তাই দ্রুততার সাথে মেহেরপুরের জিআই স্বীকৃতি অর্জনের চেষ্টা করার সময় এসেছে।
হিমসাগর আম
হিমসাগর আমের জন্য বিখ্যাত মেহেরপুর জেলা। এই আর সারাদেশে কম বেশি উৎপাদন হলেও মেহেরপুরের হিমসাগর অনন্য। যা অন্য কোন জেলার আমে পাওয়া দুষ্কর। মেহেরপুরের আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর যায় বিদেশে। এই আমের পরিচিতি সারাদেশেই প্রায় একই রকম। মেহেরপুরের হিমসাগর আমের জিআই স্বীকৃতি অর্জন করে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জিআই স্বীকৃতির ব্যাপক কদর রয়েছে। জিআই স্বীকৃতি অর্জন করলে হিমসাগর জেলার পরিচিতি বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও উপহার দিবে। একই সাথে স্থানীয় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে। এই আমের সিজন শুরু হয় মে মাসের শুরুর দিকে। তখন জেলা জুড়ে থাকে উৎসবমুখর পরিবেশ।
মেহেরসাগর কলা
মেহেরপুর জেলার নামেই নামকরণ হয়েছে মেহেরসাগার কলার। এ জেলায় যত কলা উৎপাদন হয় এর মধ্যে মেহেরসাগর হয় সবচেয়ে বেশি। রোগ বালাই ও খরচ কম। বছরে ৩ বার কলা পাওয়া যায় এসব কারণে কৃষকের আগ্রহ বেশি মেহেরসাগর কলা চাষে। কৃষক লাভবান হওয়ার কারণে তিন ফসলি জমিতে বাড়িয়েছেন মেহেরসাগরের চাষ। মেহেরপুরের মাটি ও জলবায়ু মেহেরসাগর কলার চাষের বিশেষ উপযোগী হওয়ার করণে কম যত্নেই চাষ হয় মেহেরসাগর। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় মেহেরসাগর। স্বাধীন বাংলার ইতিহাসের সাথে এই কলার ইতিহাস শুরু হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের বয়সের সমান মেহেরসাগর কলা চাষের বয়স। এই কলার নিজস্ব ব্র্যান্ডিং ও বাজার সম্প্রসারণ করতে জিআই স্বীকৃতি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।