সাতক্ষীরার সম্ভাব্য জিআই পণ্য
সুন্দরবনের কোল ঘেষা একটি জেলার নাম সাতক্ষীরা। এই জেলার ইতিহাস বৈচিত্র। শুরুতে এটি যশোর জেলাধীন থাকলেও ১৮৬৩ সালের দিকে পশ্চিম বঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলায় অধীনে নিয়ন্ত্রিত হয়। এরপর খুলনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সর্বশেষ জেলার মর্যাদা পায়।
সাতক্ষীরার অর্থনীতির ফাউন্ডেশন গড়ে উঠে ব্রিটিশদের হাত ধরে। মূলত সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে এখানাকার অর্নীতিতে তাদের প্রভাব অবদান বাড়তে থাকে। সুন্দরবনের কাঠ, মধু, পশুর চামড়া,মাছ, কৃষি ইত্যাদি গুরুত পায়।(১) সাতক্ষীরা জেলা এখনো বনজ সম্পদের সমৃদ্ধ। এ জেলায় জিআই স্বীকৃতি অর্জনের মতো অনেক পণ্য রয়েছে। তার মধ্য থেকে সাতক্ষীরার সম্ভাব্য জিআই পণ্যের একটি তালিকা তোলে ধরেছি।
মাটির টালি
সাতক্ষীরার মাটির টালি বেশ দৃষ্টিনন্দন হওয়ার কারণে দেশ বিদেশের এর চাহিদা বাড়ছে। এই টালির বেশিরভাগ চলে যায় বিদেশে। এই টালি শিল্প খুবই সম্ভাবনার। টাইলসে জায়গা দখলের সুযোগ রয়েছে এই টালির। একই সাথে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ আছে। এই টালি শিল্পকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা প্রতি নিয়ত বাড়ছে কর্মসংস্থান। সাতক্ষীরার হাতে তৈরি টালির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ। এছাড়াও রপ্তানি হয় ইটালি, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, দুবাই সহ নানা দেশে। ইউরোপের দেশগুলো জিআই পণ্যের বিশেষ কদর রয়েছে। তাই জিআই স্বীকৃতি অর্জনের মাধ্যমে সাতক্ষীরার টালির বাজার সারাবিশ্বের সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখার সুযোগ আছে। যেহেতু এটি হাতে তৈরি করতে হয় তাই বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। টালি শিল্প আধুনিক মৃৎশিল্পের রোড মডেল।
পদ্ম মধু বা খলিশা ফুলের মধু
খলিশা ফুলের মধুর অন্য নাম পদ্ম মধু। খশিলা ফুলের মধু সুন্দরবনের ভাগ্য হিসেবে পরিচিত। এই মধুর স্বাদ, ঘ্রাণ এবং গুনগত মানের জন্য গোল্ড মধুও বলা হয়। অর্থাৎ অনেক বিশেষণে বিশেষায়ীত সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অঞ্চলে পাওয়া যায় এই মধু। এখানকার মানুষের অন্যতম উৎস খলিশা ফুলের মধু। তারা নানা রকম ঝুঁকি নিয়েই সংগ্রহ করে পদ্ম মধু। এটি দাম তুলনামূলক বেশি। এই মধুর ভেজাল রোদ, ক্রেতাদের হাতে খাঁটি মধু সরবরাহ করা সহ সাতক্ষীরার ব্র্যান্ডিং ও পরিচিতি বাড়ানোর জন্য জিআই স্বীকৃতি নিয়ে চেষ্টা করা যেতে পারে খশিলা ফুলের মধু নিয়ে।
সাতক্ষীরার আম
আমের জন্য প্রসিদ্ধ জেলাগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরা অন্যতম। এই জেলার আমই সর্বপ্রথম রপ্তানি হয়েছে। সাতক্ষীরার মাটি, পানি ও জলবায়ুর কারণে এখানকার আম অত্যন্ত সুস্বাদু। এই আমগুলো চিহ্নিত করে জিআই স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা করতে পারে আম চাষী সহ জেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরার ব্র্যান্ডিং ও অর্থনীতির উন্নয়ন করতে ব্যপক ভূমিকা রাখতে পারে সাতক্ষীরার আম। জিআই স্বীকৃতি অর্জন করলে রপ্তানির মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। সাতক্ষীরার আমের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো দেশের অন্য এলাকার আমের চেয়ে দ্রুত পরিপক্ব হয় এবং বাজারে আসে।
সাতক্ষীরার সন্দেশ
সন্দেশ উৎপাদনের দিক থেকে সম্ভবত সাতক্ষীরাই সবচেয়ে এগিয়েছে। এত বেশি দোকান ও এত শ্রমিক সন্দেশ তৈরিতে নিয়োজিত তা অন্য কোন জেলায় আছে কিনা জানা নেই। সাতক্ষীরায় ৪ রকমের প্রসিদ্ধ সন্দেশ উৎপাদন হয়। এসব সন্দেশ ডেলিভারিও করা যায় সারাদেশে। ই-কমার্সের মাধ্যমে এখন ডেলিভারি ব্যবস্থাও উন্নত হয়েছে। তাই সাতক্ষীরার সুস্বাদু ও প্রসিদ্ধ সন্দেশগুলো জিআই স্বীকৃতি অর্জনের মাধ্যমে জেলা ব্র্যান্ডিং সহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। জিআই স্বীকৃতির সুনাম কাজে লাগিয়ে ই-কমার্সের মাধ্য সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব সাতক্ষীরার সন্দেশ।
সাতক্ষীরার মেলে মাদুর
সাতক্ষীরার ঐতিহ্য মেলে মাদুর। নিপুন হাতের তৈরি মেলে মাদুর সারাদেশে পরিচিতি। এই মাদুরের সাথে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের জীবিকা নির্বাহ। মেলে ঘাস থেকেই তৈরি হয় মেলে মাদুর। ঐ অঞ্চলের মাটিতেই জন্মায় এ ঘাস। আগে তা জন্মাতো নদী ও খাল পাড়। মেলে মাদুরের জিআই স্বীকৃতি পেলে ঐতিহ্য সম্প্রসারণ হবে।