যশোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

যশোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

ফুলের রাজধানী, যশোরের অবস্থান ভৈরব নদের তীরে। এটি একটি প্রাচীন জনপদ। যশোরের খেজুর গুড়ের খ্যাতি সারাদেশে। যা সম্প্রতি জিআই জার্নলে প্রকাশ পেয়েছে। খেজুরের গুড়ের মতো এমন অনেক পণ্য রয়েছে যশোরে যা জিআই স্বীকৃতি অর্জনের সকল শর্ত পূরণ করতে সক্ষম। যশোরের অর্থনীতিতে দারুণভাবে অবদান রাখছে চিংড়ি চাষ। এটি একটি রপ্তানি মুখী পণ্য। যা যশোরের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। এছাড়াও যশোরের ফুল সারাদেশ সহ বিদেশেও বিদেশে রপ্তানি হয়। যশোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্যগুলোর মধ্য থেকে আলোচনা করছি কয়েকটি নিয়ে।

যশোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য যশোর স্টিচ
যশোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য যশোর স্টিচ শাড়ি

যশোর স্টিচ

বাংলাদেশের বস্ত্রখাতে যশোর স্টিচ একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় নাম। মূলত কাঁথা, শাড়ী, থ্রি পিছ সহ নানারকম পোশাকে নিজস্ব সূঁচকর্মের মাধ্যমে বাহারি নকশা ফুটিয়ে তোলেন যশোরের অন্তত ৫ হাজার নারী শিল্পী। তাদের হাত ধরেই এই সেলাই পদ্ধতি দেশ জুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে ক্রেতাদের কাছে এক হয়েছে যশোর স্টিচ। এর জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার বাড়ছে দিনে দিনে।

বাঙগালি ঐহিত্যে নকশিকাঁথার ইতিহাস হাজার বছরের। বংশপরম্পরায় নারীরা এই ঐতিহ্য বহন করেছে পরম যত্নে। এরপর এই নকশিকাঁথায় লাগে বাণিজ্যিক ছোঁয়া। সম্প্রতি জামালপুরের নকশিকাঁথা জিআই স্বীকৃতির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তেমনি যশোরের নকশিকাঁথা সহ অন্যান্য যশোর স্টিচের জিআই স্বীকৃতি অর্জনে তৎপর হওয়ার সময় এসেছে। যা বাজার সম্প্রসারণে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে। যশোর স্টিচ বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আরও বেশি গুরুত্ব পেতে পারে জিআই স্বীকৃতি অর্জনের মাধ্যমে।

যশোরের রজনীগন্ধা
যশোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য রজনীগন্ধা

যশোরের রজনীগন্ধা

ফুলের রাজ্য ধরা হয় যশোর আর গদখালিকে বলা হয় বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী। গদখালির অবস্থান যশোর শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে। এখানে রয়েছে নানা রকমের ফুলের সমাহার। বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া যশোরের ফুল যায় সারাদেশে। রপ্তানি বাজারও সম্প্রসারণ করছে যশোরের ফুল ব্যবসায়ীরা। যশোরে নানারকম ফুলের চাষ হলেও রজনীগন্ধার বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে আশির দশকে। মাটি, জলবায়ু ও কৃষকের দক্ষতার কারণে রজনীগন্ধার চাষ ও ফলন দিনে দিনে বাড়ছে। এই ফুল ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে সারাদেশ সহ বিদেশে। রজনীগন্ধা সহ এক এক করে অন্যান্য ফুলগুলোও জিআই স্বীকৃতির আওতায় নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। এগুলো বিদেশী মার্কেট সম্প্রসারণ সহ দেশের অর্থনীতিতে দারুণ অবদান রাখতে পারবে। যশেোরের ফুল চাষে পুরুষের পাশাপাশি পদচারণা বেড়েছে নারীদের। তারা এখন নিজেরা উপার্জন করে যোগান দেন পরিবারের ব্যয় মিটাতে।

যশোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য জামতলার মিষ্টি

জামতলার মিষ্টি

রসগোল্লার একটি সংস্করণ জামলতার মিষ্টি। এটি যশোরের জামতলা বাজারে উৎপন্ন বিখ্যাত মিষ্টি। যার খ্যাতি ছড়িয়েছে সারাদেশে। এই মিষ্টি তৈরি করা হয় ছানা দিয়ে। এরপর গোল আকৃতি করে ঘন চিনির সিরায় ডুবিয়ে রাখা হয়। এই মিষ্টির স্রষ্টার নামে কেউ কেউ সাদেক গোল্লা নামেও ডাকেন। এই মিষ্টির ইতিহাস ৬ দশকের। প্রচলিত আছে, “চুলা ও পাত্র অন্যত্র নিয়ে গেলে এই মিষ্টির স্বাদ থাকে না।” অর্থাৎ এই মিষ্টির স্বাদের সাথে জামতলার নিবির সম্পর্ক রয়েছে। তা হতে পারে সেখানের দুধ, আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব। জামতলার রসগোল্লা তৈরির জ্বালানীও নির্দিষ্ট। জামতলার মিষ্টি জিআই স্বীকৃতি পেলে এর পরিচিতি উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাবে।

ক্রিকেট ব্যাট
ক্রিকেট ব্যাট যশোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

ক্রিকেট ব্যাট

ক্রিকেট খেলা প্রায় সারাদেশেই সমানভাবে পরিচিত। এই খেলার অন্যতম অনুসঙ্গ ব্যাট। যার যোগান হয় যশোরের নরেন্দ্রপুর গ্রাম থেকে। এই গ্রামের শতশত পরিবার ব্যাট তৈরির সাথে নানাভাবে জড়িয়ে আছে। পূরুষের পাশাপাশি নারীদেরও অংশগ্রহণ রয়েছে।

সঞ্জিৎ মজুদমারের হাত ধরে ১৯৮৬ সালে যশোরে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাট তৈরি শুরু হয়। এরপর চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে শত শত পরিবার সাদরে গ্রহণ করে ব্যাট তৈরির পেশা। তাদের বানানো ব্যাটের দাপটে সংকুচিত হয় ব্যাটের আমদানি এবং পূরণ হয় দেশীয় ব্যাটের চাহিদা। এই ব্যাটের জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে যশোরের ব্যাটের ব্র্যান্ডিং ও চাহিদা বহুগুণে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

এই পণ্যগুলো ছাড়াও যশোরের আরও কিছু পণ্য জিআই স্বীকৃতির শর্তগুলো পূরণ করতে সক্ষম। এসব পণ্য চিহ্নিত করে এক এক করে জিআই স্বীকৃতির জন্য এগিয়ে আসতে পারে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, উৎপাদনকারী, জেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন সংগঠন। এতে করে তাদের স্বার্থ আদায়ের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে জেলার স্বার্থ উন্নয়ন হবে। আর যশোরের প্রাচীন বই পত্র থাকার কারণে রেফারেন্স পাওয়াও সহজ। তাই যশোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্যগুলোর তালিকা করা দরকার।

Leave a Reply

Scroll to Top