বরিশালের সম্ভাব্য জিআই পণ্য
ধান নদী আর খাল এই তিনে বরিশাল। এই স্লোগানকে সামনে রেখে যুগের পর যুগ পথ চলছে বরিশাল জেলা। প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদনের পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য নদী ও খাল। কমতি নেই জলাশয়েরও। এগুলোই বরিশালের সৌন্দর্য। এই কারণে মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ বরিশাল জেলা। দেশের যে কয়টা জেলায় ইলিশ উৎপাদন হয় এর মধ্যে বরিশাল জেলা অন্যতম। এখানকার ইলিশের স্বাদ ভিন্ন। তবে বরিশালে নেই কোন স্বীকৃত জিআই পণ্য। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বরিশালের আমড়ার জিআই স্বীকৃতি চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও বরিশালের সম্ভাব্য জিআই পণ্যের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তোলে ধরছি।
বরিশালের ইলিশ
ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। ’বাংলাদেশ ইলিশ’ নামে জিআই পণ্যের তকমা নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। বরিশালের ইলিশের স্বাদ স্বতন্ত্র। বরিশালের মানুষের ভাষ্যমতে, স্বাদের ইলিশ বলতে এই ইলিশকেই বুঝানো হয়। আমরাও একাধিকবার এই ইলিশ খেয়ে পার্থক্য উপলব্ধি করেছি। তাই যথাযথ ডকুমেন্টেশনের মাধ্যমে বরিশালের ইলিশের আলাদা জিআই স্বীকৃতি চাওয়া যেতে পারে। জিআই স্বীকৃতি অর্জন করা গেলে রপ্তানিতে স্বতন্ত্র দখল বাড়াতে পারে। যা জেলার অর্থনীতি উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
বরিশালের বালাম চাল
প্রাচীনকাল থেকে ধনের জন্য খ্যাতি আছে বরিশালের। পুরাতন বইপত্র ঘাটলে তার প্রমাণ মিলে। বরিশালে উৎপাদন হতো নানা রকম ধানের। এক সময় দেশের ধানের জোগানের জন্য বরিশাল জেলাকেই বিবেচনা করা হতো। বরিশালের ছিল কিছু নিজস্ব জাত। এর মধ্যে বালাম চাল অন্যতম। বালাম চাল চিকন ও সুস্বাদু। বালাম ধানের চাষ পদ্ধতি জৈব সারনির্ভর। এটি আবাদ করা হয় রোপা আমন মৌসুমে।
বালাম চালের খাবার খেয়ে যে কেউ তৃপ্ত হতে পারে। এই চাল বরিশালবাসীর গর্বের ধন। তাই আঞ্চলিক গান প্রচলীত আছে, “বাংলাদেশের অভাব কি ভাই বাংলাদেশের অভাব কি, বরিশালের বালাম চাল আর ঢাকার আছে গাওয়া ঘি।” গানের এই লাইনগুলোই বুঝিয়ে দেয় বালম চাল নিয়ে মানুষের গর্বের কথা। এ ছাড়াও চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং, মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতার প্রসংশার কথাও শোনা যায় বালাম চালের খাবার নিয়ে। এই বালাম চালের জিআই স্বীকৃতি অর্জনের মাধ্যমে গবেষণা, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে মনযোগ দেওয়ার তাগিদ তৈরি হতে পারে। এই কারণে জিআই স্বীকৃতি দরকার।
বরিশালের পান
শতশত বছর আগে থেকে বরিশালের উজিরপুরে পান উৎপাদন ও বিক্রি হয়ে আসছে। কৃষকদের সম্মেলিত আগ্রহে সন্ধ্যা নদীর তীরে কালীবাড়ি নামক পানের হাট ইতিহাসের সাক্ষী। এই বাজার কত আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস জানা যায় না, সবাই বলেন বাপদাদা আমল থেকে দেখে আসলে এই হাট। আবার কেউ বলে ২’শ বছরের বেশি পুরানো হাট। অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে বরিশালের পান বড়, ও মিষ্টি যুক্ত। যার ফলে বৃহত্তর বরিশাল সহ কদর রয়েছে অন্যান্য জেলাগুলোতেও। বরিশালের উজিরপুরের পান চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী সহ নানা জেলায় যায় নিয়মিত।
উজিরপুরে অসংখ্য পানের বরজ রয়েছে। এখানকার প্রধান কৃষি অর্থনীতিই পান। এই পান চাষ করেই ভাগ্য বদল করেছে হাজার হাজার কৃষকের। একসময় যেসব জমিতে ধান বা অন্য ফসল উৎপাদন হতো তা এখন পানের দখলে। দিনে দিনেই বাড়ছে বরজ ও পান কেন্দ্রিক কর্মসংস্থান। বর্তমানে উজিরপুরে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে পানের বরজ কেন্দ্র করে। এটি তাদের জন্য ১২ মাসের আয়ের উৎস। জিআই স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা করা যেতে পারে বরিশালের পানের।
গুঠিয়ার সন্দেশ
বরিশালের বানারীপাড়ার গুঠিয়ার সন্দেশ সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানে দুই প্রকারের সন্দেশ তৈরি হয়। এক প্রকার গুড়ের সন্দেশ এবং অন্য প্রকার চিনির সন্দেশ। মূলত গুঠিয়ার সন্দেশ উৎপাদন শুরু হয়েছিল ১৯৬২ সালে সতীশ চন্দ্র দাসের হাত ধরে। তিনি এই সন্দেশের স্রষ্টা। সতীশের সন্দেশ এখন গুঠিয়ার অনেকগুলো দোকানে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিন্ন স্বাদ ও আকৃতির সন্দেশের জিআই স্বীকৃতির চেষ্টা করা যেতে পারে। এতে করে বরিশালের ব্র্যান্ডিং ও অর্থনীতির উন্নয়নের সুযোগ সম্প্রসারণ হবে।
গৌরনদীর দই
গৌরনদীর দই সর্বত্র বিখ্যাত। যা স্থানের নামেই পরিচিতি অর্জন করেছে সারাদেশে। স্বাদে-গুণে অনন্য হওয়ার কারণে গৌরনদীর দই এখন সারাদেশেই বিখ্যাত। ই-কমার্সের কারণে তা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। গৌরনদীর দইয়ের ঐতিহ্য শত বছরের। এই দই জিআই স্বীকৃতি অর্জন করতে পারে।