পাবনার সম্ভাব্য জিআই পণ্য
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে পাবনা জেলার অন্যতম। এ জেলার ঘি, লুঙ্গি, শাড়ি, চলন বিলের কই দেশ বিখ্যাত। তবে এখনো পাবনার কোন স্বীকৃতি প্রাপ্ত জিআই পণ্য না থাকার কারণে আজ লিখছি পাবনার সম্ভাব্য জিআই পণ্য নিয়ে।
পাবনার লুঙ্গি
বাংলাদেশের তাঁতশিল্প অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প। সেই তাঁতেই তৈরি হয় লুঙ্গী যা ছেলের পোশাকের চাহিদা পূরণ করে। পাবনা জেলা সদরের কাছেই অবস্থিত দোগাছী, শহরের মুজাহিদ ক্লাব (শিবরামপুর), ভাঁড়ারা, জালালপুর, নতুনপাড়া, গঙ্গারামপুর, বলরামপুর, মালঞ্চি, কুলুনিয়া, ছোন্দহ, ছেচানিয়া, জোড়গাছা, সোনতলা, কাশিনাথপুর, বেড়া উপজেলার কৈটলা, পাটগাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় টিকে আছে হস্তচালিত তাঁত। সব জায়গায় পাওয়ারলুম তাঁতের দৌরাত্ম্য চলছে।
বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার লুঙ্গী বিক্রি হয় এবং রপ্তানি করে বছরে আয় হচ্ছে ১০ লাখ ডলারের বেশি। পাবনার ঐতিহ্যবাহী হ্যান্ডলুম তাঁতশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পাবনার লুঙ্গীকে জিআই করি উচিত।
পাবনার লিচু
আমরা সবাই জানি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলাকে লিচুর রাজধানী বলা হয়। কারন ঈশ্বরদীতে শুরুতে শখ করে যেখানে সেখানে লিচুর গাছ লাগিয়ে ভাল ফলন পাওয়ার পরে তারা বাণিজ্যিক ভাবে লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে। গত বছরে ঈশ্বরদীতে লিচু চাষ করা হয়েছে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। সেখনে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু গত বছরে ৬৫০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে।
ঈশ্বরদী লিচুর এই সম্ভাবনাময় উৎপাদন এবং বিক্রি ঐ এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই কারণে পাবনার লিচু জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেলে লিচুর বাণিজ্যিক উৎপাদনে সবাই আরো বেশি সচেতন হবে।
পাবনার ঘি
পাবনা জেলার ঘি সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই বিখ্যাত। কারণ শোনা যায় এই এলাকার ঘি এতটাই ভাল মানের যে মহাত্মা গান্ধীর জন্য পাবনা থেকে ঘি পাঠানো হতো। মূলত এই এলাকার দুগ্ধ উৎপাদনের প্রাচুর্যতাই ভাল ঘি উৎপাদনের মূল কারণ। পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, “এ জেলায় ঘি উৎপাদন কারখানা রয়েছে ১২২টি। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৭২ কেজি, মাসে ৬২ হাজার ১৬০ কেজি এবং বছরে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ কেজি ঘি উৎপাদন হয়। বছরে প্রায় ৮৯ কোটি ৫১ লাখ ৪ হাজার টাকার ঘি কেনাবেচা হয়।” পাবনার ঘি বর্তমানে বিশ্বের ১৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে।
পাবনা জেলার ছানা ও ঘি বিদেশে রফতানি করে প্রতি বছর প্রায় ৪৭ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। পাবনা জেলার ঘি শুধু বিখ্যাতই নয়, এই ঘি এর কারণে পাবনা জেলা আলাদা ভাবে পরিচিতি পেয়েছে। জেলার ঘি জিআই ট্যাগ পেলে তা আরও বেশি সুনাম ও সুযোগ বয়ে আনবে।
পেঁয়াজ
পাবনা জেলার সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলাতে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের চাষ হয়। এই দুই জেলাতে যে পরিমাণ পেঁয়াজ এর চাষ হয় তা সারা দেশের চাষের এক পঞ্চমাংশ। এই জেলাতে সাধারণত দুটো পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়। একটি হলো কন্দ চাষ পদ্ধতি আরেকটি হলো চারা চাষ পদ্ধতি। ভারত থেকে প্রতি বছর পেঁয়াজের আমদানি করা হয়। কিন্তু আমরা যদি দেশের পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে পারি এবং পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি তাহলে আমদানি বাণিজ্যের হার কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
দেশের শস্য তালিকার মধ্যে পাবনার জেলার পণ্য হিসেবে পেঁয়াজ জিআই করা গেলে এদিকে পেঁয়াজ চাষের সাথে যারা জড়িত তারা সকলেই উপকৃত হবেন এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতেও তারা সচেতন হবেন।