রাজশাহীর সম্ভাব্য জিআই পণ্য

দেশের অন্যান্য জেলাগুলোর তুলনায় জিআই পণ্যের সংখ্যার দিক থেকে রাজশাহী প্রথম সাড়ির একটি জেলা। এ জেলার আম, সিল্ক শাড়ি ও মিষ্টি পান জিআই স্বীকৃতি পেয়ে থাকলেও রাজশাহীর সম্ভাব্য জিআই পণ্য রয়েছে বিস্তর। আজকে আলোচনা করবো রাজশাহীর সম্ভাব্য জিআই পণ্য নিয়ে।

রাজশাহীর গরদ শাড়ি

বাংলাদেশের রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি রেশম চাষ হয়। রেশম থেকে উৎপাদিত হয় সিল্ক। সেকারণেই রাজশাহী শহরকে সিল্ক সিটি নামকরণ করা হয়েছে। রেশম থেকে তৈরি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী শাড়ির নাম গরদ। এই গরদ শাড়ির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এক কালার শাড়ি হয় অনেকটা হাতির দাঁতের মত রঙ হয় এবং পাড় হয় লাল, সবুজ এবং গোল্ডেন সুতার নিখুঁত কাজ থাকে। গরদ শাড়ি শুধু রাজশাহীতেই হয়। গরদের শুধু শাড়ির না, পাঞ্জাবি তৈরি হয়। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী গরদ শাড়িকে আমাদের নিজেদের পণ্য হিসেবে টিকিয়ে রাখতে হলে গরদ সিল্ক শাড়িকে জিআই করা উচিত।

রাজশাহীর সম্ভাব্য জিআই পণ্য শখের হাড়ি
রাজশাহীর সম্ভাব্য জিআই পণ্য শখের হাড়ি

রাজশাহীর সম্ভাব্য জিআই পণ্য শখের হাড়ি

মেয়ের বাড়িতে, মেয়ের শশুরবাড়িতে মাটির শখের হাঁড়িতে করে মিষ্টি নিয়ে যাওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। এই এলাকার জীবনযাপনের সাথে শখের হাড়ি বিভিন্ন ভাবে জড়িয়ে আছে। বীতপাল ও ধীমান নামের দুজন বিখ্যাত মৃৎশিল্পী অতি এলাকায় অনেক বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের দুজনের হাত ধরেই শখের হাড়ির প্রচলন শুরু হয়। শখের হাড়িতে রঙ দিয়ে বাহারি নকশা তৈরি করা হয় এবং তাতে শখের জিনিস রাখা হয় এবং তা শিকায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। আমাদের ঐতিহ্যবাহী এই পণ্যকে ধরে রাখতে রাজশাহীর শখের হাড়িকে জিআই স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন।

রাজশাহীর সম্ভাব্য জিআই পণ্য রসকদম্ব
রাজশাহীর সম্ভাব্য জিআই পণ্য রসকদম্ব

রাজশাহীর রসকদম্ব

রাজশাহী জেলার বিখ্যাত মিষ্টির নাম রসকদম্ব হলেও এতে কোন রস নেই। দেখতে গোলাকৃতির এবং অনেকটাই কদম ফুলের মত। তাই এর নাম রসকদম বা রসকদম্ব। ধারনা করা হয় সুলতানি আমলে এই মিষ্টি তৈরি হয় । সে সময়ের অনেক মিষ্টি হারিয়ে গেলেও রসকদম্ব এখনও টিকে আছে। রসকদম্ব মূলত রসগোল্লার রস ঝরিয়ে, ক্ষীর এবং চিনির দানা দিয়ে তৈরি করা হয়। এতো বছরের পুরোনো মিষ্টিকে ধরে রাখার জন্য রাজশাহী জেলার রসকদম্ব কে জিআই করা প্রয়োজন।

রাজশাহীর গুড়
রাজশাহীর গুড়

রাজশাহীর গুড়

রাজশাহী জেলা শুধুমাত্র আমের জন্য বিখ্যাত নয়। রাজশাহীর মাটিতে অনেক খেজুরের গাছ ভাল হয় এবং সেই সাথে দিন দিন খেজুরের গাছের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে প্রতিবছর খেজুরের গুড়ের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২০২২-২০২৩ সালে রাজশাহীতে মোট গুড়ের উৎপাদনের পরিমাণ ৮ হাজার ৮৬৪ মেট্রিক টন যার মূল্য ১৪১ কোটি ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। খেজুরের গুড়ের এই বিপুল পরিমাণ উৎপাদন এবং গুণগত মানের জনপ্রিয়তার কারনেই এই গুড় এতো বিখ্যাত। তাই রাজশাহীর খেজুরের গুড় জিআই ট্যাগ পেলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে।

রাজশাহীর খরেয়

রাজশাহী বিভাগের চারঘাট উপজেলা খয়ের উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত। তবে খয়ের শিল্পের সাথে জড়িতরা সঠিক মূল্য না পাওয়ার কারনে এই শিল্প আজ হুমকির মুখে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা খয়েরের মূল্য কম হওয়ার কারনে এই শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে দেশের ডলার ক্রাইসিস ও আমদানি বাণিজ্য কমাতে এই হারিয়ে যাওয়া খয়ের শিল্পকে আমরা পুনরুদ্ধার করতে পারি। এই কারনেই রাজশাহী জেলার চারপাশ উপজেলার এই খয়ের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া প্রয়োজন।

Leave a Reply

Scroll to Top