সিরাজগঞ্জের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সিরাজগঞ্জ। তাই এখানকার পণ্যের সাথে রবীন্দ্র পরিবারের একটু সম্পর্কও রয়েছে। জিআই পণ্যের ক্ষেত্রে প্রাচীন দলীল থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। সিরাজগঞ্জের পণ্যের ক্ষেত্রে যদি রবীন্দ্রনাথের রেফারেন্স পাওয়া যায় পণ্যগুলোর জিআই স্বীকৃতি পাওয়া সহজ হবে। আজকে আলোচনা করবো সিরাজগঞ্জের সম্ভাব্য জিআই পণ্য নিয়ে।

সিরাজগঞ্জের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ির ইভেন্ট
মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ির ইভেন্ট

সিরাজগঞ্জের তাঁতের শাড়ি

দেশের অন্যতম তাঁত অধ্যুষিত অঞ্চল সিরাজগঞ্জ। তাঁত পণ্য উৎপাদনে এ জেলা সুপরিচিত এবং সমৃদ্ধশালী। সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁতিরা শাড়ি উৎপাদনে অনেক এগিয়ে রয়েছে। সিরাজগঞ্জের তাঁতীরা শাড়ি তৈরী করে বংশানুক্রমে। এখানকার শাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শাড়ির পাড় এবং কিনারের কাজ। সিরাজগঞ্জের কটন শাড়ির পাশাপাশি সফটসিল্ক ও হাফ সিল্ক শাড়ির জনপ্রিয়তা রয়েছে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, এনায়েতপুর বেলকুচি সদর উপজেলা সহ যমুনা নদীর তীর ঘেষা প্রায়ে ৫০ কিলোমিটার এলাকায় তাঁত শিল্প হিসেবে পরিচিত। বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের হাট শাহজাদপুর। ১০০ কাউন্টের সুতায় উন্নত মানের শাড়ি তৈরি হয় চিত্তরঞ্জন তাঁতে। পদ্মপাড়,মাধবীলতা, মরবী,তেরবী,ও লতা পাতা পাড়ের শাড়ি তৈরি করা হলেও এখন তাঁতিরা পরিবর্তন এনেছে শাড়ির পাড়ে নকশা ও ডিজাইনে। সিরাজগঞ্জে হাফ সিল্ক, তন্তুুজ, বেনারসি, সিল্ক, রেশমি, কটন, জামদানী, কাতান তৈরি হয়।

পাবনার সম্ভাব্য জিআই পণ্য লুঙ্গি

সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এনায়েতপুর বেলকুচি রায়গঞ্জ অন্যতম। প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ পিস লুঙ্গি তৈরি হয় বেলকুচির তামাই গ্রামে। মূলত এই গ্রাম পুরোটাই লুঙ্গি নির্ভর। রায়গঞ্জে প্রায় ২৫০ তাঁতীর ২০০০ এর বেশি লুঙ্গির তাঁত রয়েছে এবং ১ দিনে ৫ থেকে ৬টি লুঙ্গি তৈরি করা হয় প্রতিটি তাপে এবং এই লুঙ্গি গুলো ৬২ কাউন্ট সুতোই তৈরি হয় তাই গুণেও মানে সেরা। এখানে সকাল থেকে শুরু করে প্রায় মধ্যরাত ভোর পর্যন্ত তাদের কাজ চলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও তাদের কাজে সহায়তা করে।

সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি তে নীল সবুজ সুতার প্রাধান্যই বেশি দেখা যায়। লুঙ্গি তৈরির জন্য চালের গুড়া, ময়দার গুড়া, এরারুট দিয়ে মাড় দেয়ার কাজটা নারী-পুরুষেরা নিলে সম্পন্ন করে থাকে এই কাজকে তারা পাড়ি দেয়া বলে। চরকায় সুতা ভরা রবিনে রংবেরঙের সুতা পেঁচানো এবং ড্রামহুইলে সুতা দেওয়া হয় এবং এখানে আধা যান্ত্রিক মেশিনে লুঙ্গি তৈরি করা হয়। সুতা লম্বালম্বি ভাবে ড্রামহুইল থেকে দেয়া হয় ছাঁচে অর্থাৎ সানা করা হয় এরপরেই লুঙ্গি বোনা হয় তাঁতে। খটখটি তাঁতেই চলে বেশিরভাগ তাঁত।

মানিকগঞ্জের সম্ভাব্য জিআই পণ্য পানতোয়া
মানিকগঞ্জের সম্ভাব্য জিআই পণ্য পানতোয়া

সিরাজগঞ্জের পানতোয়া

সিরাজগঞ্জের পানতোয়া খুবই বিখ্যাত এবং পানতোয়ার ইতিহাস বেশ পুরনো। সুরেন্দ্রনাথ কুন্ডু দেশভাগের সময় ব্যবসা শুরু করেন এবং তার একমাত্র ছেলে প্রাণ কৃষ্ণকে নিয়ে তার মিষ্টির দোকানে ডালের আমৃতি এবং মুরুলি ভাজা বিক্রি করতেন এর কিছুদিন পরেই প্রাণকৃষ্ণ বাবু পানতোয়া তৈরি করলেন তার দোকানের তৈরি খির দিয়ে। সে থেকে সিরাজগঞ্জের পানতোয়া জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের পছন্দের তালিকায় রয়েছে পানতোয়া মিষ্টি। সাধারণত পানতোয়া মিষ্টি তৈরি করতে ঘি, এলাচ গোড়া, চিনি, মাওয়া গুড়া, পানি, ছানা, তেল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। পানতোয়া মিষ্টি তিন সেন্টিমিটার লম্বা হয়, পানতোয়া মিষ্টি ভেজে তারপর সাত আট ঘন্টা রসে ভিজিয়ে রেখে খাবার উপযোগী করা হয়।

সিরাজগঞ্জের সম্ভাব্য জিআই পণ্য বাঘা আইর মাছ
সিরাজগঞ্জের সম্ভাব্য জিআই পণ্য বাঘা আইর মাছ

সিরাজগঞ্জের বাঘা আইর মাছ

যমুনা নদীর তীরে সিরাজগঞ্জ জেলা অবস্থিত। বিভিন্ন ধরনের মাছের মধ্যে অন্যতম মাছ হল বাঘা আইর মাছ। সিরাজগঞ্জের বাঘা আইর মাছ ১১০ কেজি থেকেও বেশি ওজনের হয়ে থাকে। বাঘা আইর মাছ ওজনে যত বেশি তার স্বাদ তত বেশি হয়। আইর মাছ পেশি গঠনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে এবং ছোটদের জন্য ব্রেন ডেভেলপমেন্টের কাজ করে।

Leave a Reply

Scroll to Top