ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি : দেশের জিআই বৃদ্ধিতে করণীয়
গত ২৫ মে ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশের জিআই পণ্য বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক একটি ক্লাস হয়েছে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে। এতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন আলিয়া’স কালেকশনের স্বত্বাধিকারী জেনিস ফারজানা তানিয়া। তার বক্তব্যের শ্রুতি লিখন:
বাংলাদেশের জিআই পণ্য বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করার জন্য ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এটি একটি সময় উপযোগী সেমিনার। বাংলাদেশের জিআই পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে এমন প্রচুর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার দরকার। জিআই পণ্য বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমরা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হচ্ছি। এর ফলে ২০২৬ সাল থেকে আমরা জিএসপি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ডলার সংকট এখনি তীব্র। জিএসপি সুবিধা উঠে গেলে তা আরও বাড়তে পারে। তাই জিআই পণ্যের সংখ্যা বাড়লে রপ্তানির সুযোগ বাড়ার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বৃদ্ধি পাবে।
ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি) একটি নন প্রফিট অর্গানাইজেশন। ইডিসির সৃষ্টি হয়েছিল ই-কমার্স, বিশেষ করে দেশি পণ্যের ই-কমার্সের গবেষণা, লেখাপড়া, জরিপ, ডকুমেন্টেশন, কনটেন্ট ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিয়ে। ইডিসি সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। ইডিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিকত কনটেন্ট পড়ার আগে কখনোই জানতাম না বাংলাদেশে ১০০ এর বেশি রকমের শাড়ি হয়, ১১০ রকমের থ্রিপিস হয়। দেশি শাল কিংবা হোম মেড ফুড নিয়ে গবেষণামূলত তথ্য জানার সুযোগ হয়েছে ইডিসির মাধ্যমে পপি আপুর জরিপের কারণে। বর্তমানে জিআই পণ্য নিয়ে প্রতিদিন কাজ করছে ইডিসি। ইতিমধ্যে আমরা ২২টা ড্রাফট ডকুমেন্ট করেছি। নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা ও মুক্তাগাছার মন্ডার জিআই আবেদন হয়েছে। মৌলভীবাজারের আগর, আতর ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ইডিসি থেকে ডকুমেন্টেশন করে দেওয়া হয়েছে।
দেশের ই-কমার্স ক্লাবের সূচনার সাথে মিফতাউল জান্নাতি সিন্থিয়া আপুর নাম জড়িয়ে আছে। রাজিব আহমেদ স্যারের গাইডলাইন, ইডিসি টিমের সহযোগিতা এবং সিন্থিয়া আপুর প্রচেষ্টার কারণে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ই-কমার্স ক্লাব গঠিত হয়। এর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদা কোন ই-কমার্স ক্লাব ছিল না। এই ক্লাবের পর সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে ই-কমার্স ক্লাব গঠন হয়।
বর্তমানে আমাদের কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জিআই পণ্য। গত ১০ বছরে আমরা মাত্র ১৩টি জিআই স্বীকৃতি পেয়েছি। আরও ২২টির মতো জিআই পণ্য গ্রহণযোগ্য ডকুমেন্টেশনের অভাবে এখনো স্বীকৃতি পায়নি। খাতুনে জান্নাত আশা আপু এবং রাজিব আহমেদ স্যারের প্রচেষ্টায় এই বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে জিআই পণ্য নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ শুরু করেছে ইডিসি টিম ও দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তারা। এরপর থেকেই বাংলাদেশের জিআই পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে অগ্রহস হচ্ছে।
২২টি জিআই পণ্যের ড্রাফট ডকুমেন্ট করেছেন আশা আপু। ৫টি নতুন আবেদনের পাশাপাশি ২টি আবেদনকৃত ডকুমেন্টেশনের গ্রহণযোগ্য ডকুমেন্ট করে ডিপিডিটি বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি পাশের দেশ ভারতের দিকে তাই তাদের জিআই পণ্যের সংখ্যা ৪’শ এর বেশি। প্রবুদ্ধ গাঙ্গলী স্যার থেকে আমরা জেনেছি পরবর্তীতে এক সাথে ১০০টি জিআই পণ্য স্বীকৃতি পাবে ইন্ডিয়াতে। সেখানে আমাদের অবস্থা একটু সবাই ভাবুন।
জিআই পণ্য বৃদ্ধিতে আমাদের বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। তার কিছু কিছু আমরা ইতিমধ্যে করে চলেছি। যেমন জিআই পণ্য নিয়ে কনটেন্ট বাড়ানো, নিয়মিত অনলাইন ও অফলাইনে প্রচারণা চালানো, সম্ভাব্য জিআই পণ্য খোঁজে বের করা, ডকুমেন্টেশন তৈরি করা, আবেদন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগ্রহী করা ইত্যাদি।
আরেকটা দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। তাহলেই দ্রুত বাড়বে জিআই পণ্যের সংখ্যা এবং জিআই পণ্যের আলোচনা। ইন্ডিয়াতে ওয়ান ডিস্ট্রিক ওয়ান প্রোডাক্ট কৌশল বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমাদের ওয়ান উপজেলা ওয়ান প্রোডাক্ট বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে আমরা ৫০০ পণ্যের তালিকা পেয়ে যাবো। সেখান থেকে ৫০টি করে পণ্য নিয়ে কাজ করা কঠিন কিছু না। এই কাজটি করলে বাংলাদেশের জিআই পণ্যের হালচাল পুরাই বদলে যাবে। সেই সাথে দেশের সম্ভাব্য সকল পণ্য জিআইয়ের জন্য মনোনিত হওয়ার সুযোগ থাকছে। আজকে যদি আমরা ৫০০ পণ্যের তালিকা করতে পারি। তাহলে ৫ বছর পর তা হাজার পণ্যের তালিকা ছাড়াবে ইন শা আল্লাহ্। ডকুমেন্টেশন তৈরিতে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে।
জিআই পণ্য নিয়ে আগ্রহী হয়ে কাজ করার জন্য এবং আজকের সেমিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য আপনার সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।