জিআই ও কৃষি পণ্য
গত ২৭ মে ২০২৩ তারিখে রাজধানীর উত্তরায় ‘জিআই ও কৃষি পণ্য’ শীর্ষক ইভেন্ট হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সহজসাধ্যের স্বত্বাধিকারী ক্যামেলিয়া রহমান। বিশেষ অতিথি জেনিস ফারজানা তানিয়ার বক্তব্যের শ্রুতি লিখন:
বর্তমানে ফেসবুক ও গণমাধ্যমে একটি আলোচিত বিষয়বস্তু হচ্ছে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ময়মনসিংহের খাতুনে জান্নাত আপু এবং রাজিব আহমেদ স্যারের প্রচেষ্টায় ১লা জানুয়ারি থেকে ফেসবুকে জিআই পণ্যের আলোচনা জোড়ালো হয়। এরপর থেকেই আরিফাদের মাধ্যমে জিআই পণ্য নিয়ে কনটেন্ট বাড়তে থাকে ইন্টারনেটে। বিভিন্ন স্থানে ইভেন্ট এবং আলোচনাও বাড়তে থাকে। সাধারণ মানুষের মাঝে জিআই পণ্যের আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে গুগল কিংবা ফেসবুকে জিআই পণ্য নিয়ে সার্চ করলে এতো কনটেন্ট পাওয়া যায় যা পড়ে শেষ করতে চাইলেও বেগ পেতে হয়।
জিআই পণ্যের সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ ডকুমেন্টেশন তৈরি করা। এরজন্য প্রয়োজন হয় প্যাসিফিক তথ্য আর পুরাতন রেকর্ডপত্র। রেফারেন্সের জন্য সাহিত্য বেশ ভূমিকা রাখছে। অন্য মাধ্যম থেকেও রেফারেন্স নেওয়া যায় কিন্তু সাহিত্যের রেফারেন্স খুঁজে পাওয়া তুলনামূলক সহজ বলা যায়। কারণ সাহিত্য পড়তে আমরা সবাই পছন্দ করি, উপভোগ করি। পড়ার মাঝে দেশি পণ্যের নাম পেলে তা হাইলাট করে রাখতে পারি এবং ডকুমেন্টেশন তৈরি করার সময় সেই বাক্য ও বইয়ের নাম ব্যবহার করতে পারি। এছাড়া গেজেটিয়ার, পুরাতন পেপার, ম্যাগাজিন এসব থেকে রেফারেন্স পাওয়া একটু কঠিন, কারণ তা সহজলভ্য নয়। এসব রেফারেন্স খুবই গুরুত্ব বহন করে।
বর্তমানে আমাদের জিআই পণ্যের সংখ্যা মাত্র ১১টি। খুব শীঘ্রই শেরপুরের তুলশীমালা চাল, বগুড়ার দই, বাংলাদেশের শীতলপাটি জিআই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। এরপরই নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, কুমিল্লার রসমালাই, মৌলভীবাজারের আগর, আগতর, মুক্তাগাছার মন্ডাসহ আরও কিছু পণ্য জিআই তালিকাভুক্ত হতে পারে আগামী কয়েক মাসে। এভাবে বাড়তে থাকবে আমাদের জিআই সংখ্যা ইন শা আল্লাহ্।
কৃষি, হস্তশিল্প, খাবার এবং প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া পণ্যগুলো জিআই নিবন্ধনের জন্য মনোনিত হচ্ছে। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান হওয়ার কারণে অন্তত পাঁচশতাধিক কৃষি পণ্য জিআই নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তা ১-২ বছরে হবে না বা দরকারও নেই। গড়ে প্রতি বছর ৫০টি করে কৃষি পণ্যের জিআই নিবন্ধন পাওয়া কঠিন কিছু না। আমাদের দেশে বহু জাতের ধান, সবজি, ফল উৎপাদন হয়। আমরা ইতিমধ্যে কালোজিরা চাল, কাটারিভোগ চাল, ফজলি আম, খিরসাপাত আমের জিআই নিবন্ধন পেয়েছি।
শেরপুরের তুলশীমালা চাল জিআই নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে। নরসিংদীর অমৃত সাগর কলার জিআই নিবন্ধন পেতে ইডিসি টিম কাজ করছে। আমরা প্রতিদিন যত ধরনের পণ্য ব্যবহার করে থাকি এর মধ্যে কৃষি পণ্যের সংখ্যা কম নয়। পেয়াজ, মরিচ থেকে শুরু করে আলু, বেগুন সহ সবকিছুই জিআই নিবন্ধন পেতে পারে। এই মুহূর্তে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে বিরই চাল, বিন্নি চাল, বেগুন, আলু, ফুটি কার্পাস তুলা গাছ, পেপে, কাঠাল ইত্যাদিতে।
আমরা যদি চারপাশে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো ফল ও সবজিসহ অগণিত পণ্য জিআই নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই আমি বলবো সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে চারপাশে তাকান এবং চিন্তা করেন। এরপর ডকুমেন্টেশন তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। তাহলে দেখবেন ২ বছরের আমাদের জিআই চিত্র অবিশ্বাস্য ভাবে উন্নতি হবে ইন শা আল্লাহ্। বাংলাদেশ বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্বে ভালো অবস্থান আছে। আমি মনে করি আমরা সিরিয়াসভাবে কাজ করলে আয়োতনের তুলনায় জিআই পণ্যের সংখ্যাতেও অবাক হবে বিশ্ব।
নোট: হস্ত শিল্প বলতে কারিগর দ্বারা তৈরি হওয়া পণ্যগুলোকে বুঝানো হয়েছে।