জিআই পণ্য ইতিহাস ও সাহিত্য

জিআই পণ্য ইতিহাস ও সাহিত্য

গত ৫ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মিরপুর এবং মোহাম্মদপুর টিম (যারা আরিফা মডেল শেষ করে একত্রে কাজ করে) মিলে জিআই পণ্য ইতিহাস ও সাহিত্য বিষয়ক ইভেন্ট আয়োজন করেছে। এতে সভাপতি ছিলেন ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি)-এর প্রেসিডেন্ট কাকলী তালুকদার। প্রধান অতিথি ছিলেন আলিয়া’স কালেকশনের স্বত্বাধিকারী জেনিস ফারজানা তানিয়া, বিশেষ অতিথি ইডিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট নিগার ফাতেমা, ট্রেজারার উম্মে সাহেরা এনিকা, রিংকি’স এটিয়ারের স্বত্বাধিকারী রেহমুমা হোসেন, লাবন্য বাই ইশরাতের স্বত্বাধিকারী ইশরাত চৌধুরী এবং উত্তরা হোম মেইড ফুডের স্বত্বাধিকারী তানিয়া আক্তার তানি। প্রধান অতিথির বক্তব্যের শ্রুতি লিখন:

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিআই পণ্য সাহিত্য ও ইতিহাস নিয়ে আলোচনা

… আরিফা মডেল অনুসরণ করা মোহাম্মদপুর ও মিরপুর টিম যৌথভাবে ”জিআই পণ্য ইতিহাস ও সাহিত্য” নিয়ে আলাদা একটি ইভেন্ট আয়োজন করায় আমি আনন্দিত। আরিফা মডেলের কারণে আরিফারা নিজেদের দক্ষ করার পাশাপাশি টিম হয়ে দেশি পণ্য ও ই-কমার্সের স্বার্থে একসাথে কাজ করছে। যার ফলে অনেক দ্রুত শক্তিশালী হচ্ছে দেশি পণ্যের ই-কমার্স। দেশি পণ্যের আলোচনা আগে কেবল ফেসবুকে থাকলেও এখন ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। আশাকরি আগামী কয়েক মাসের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতীয় সংসদেও আলোচনা হবে ইন শা আল্লাহ্।

আপনারা জানেন রাজিব আহমেদ স্যারের সাথে আমরা কয়েকজন আরিফা মাননীয় শিল্পমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকালে জিআই পণ্য নিয়ে আলোচনা করেছি, কাকলী আপু নিজ এলাকার এমপি মহদোয়ের সাথে আলোচনা করেছে এবং আমরা শরীয়তপুরের… আসনের এমপি মহদোয়ের সাথে জিআই পণ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা প্রত্যেকে আমাদের কার্যক্রমের প্রশংসা করেছে এবং জাতীয় সংসদের জিআই পণ্যের আলোচনার আগ্রহ দেখিয়েছে।

আমি স্মরণ করছি ময়মনসিংহের আশা আপুর কথা। আপু জিআই পণ্যের ধারণাটি সামনে আনার কারণে আমরা শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের গাইডলাইন অনুসরণ করে গত পহেলা জানুয়ারি থেকে জিআই পণ্য নিয়ে সিরিয়াসভাবে কাজ শুরু করেছি। আমাদের এই প্রচেষ্টার আজ ৯৪ দিন (৫ এপ্রিল)। এর মধ্যে মুক্তাগাছার মন্ডা, মনিপুরি শাড়ি, টাঙ্গাইলের শাড়ি, কুমিল্লার রসমালাইসহ ১০-১২টি পণ্যের ডকুমেন্টেশন প্রস্তুত করা হয়েছে।

আপনারা জানেন নাটোর জেলা প্রশাসনের পক্ষে গত ৩০শে মার্চ ইডিসি টিম ডিপিডিটির কাছে “নাটোরের কাঁচাগোল্লার” আবেদন জমা দিয়েছে। আবেদন নিয়ে ৫০টির বেশি নিউজ প্রকাশ পেয়েছে। এই ৩ মাসে জিআই পণ্য নিয়ে এটি চূড়ান্ত কাজ। তাই আমাদের সকল আরিফাদের কাছে আনন্দের গর্বের। আমরাদের কোনো ক্রেডিট না থাকলেও আমরা মনের আনন্দে নাটোরের কাঁচাগোল্লার সংবাদগুলো শেয়ার করছি এবং আনন্দ উপভোগ করছি। এটি একমাত্র দেশি পণ্য ও জিআই পণ্যকে ভালোবেসে। 

জিআই স্বীকৃতির জন্য মনোনিত হতে, ডকুমেন্টেশন তৈরি করতে ও আবেদন সকল ধরনের শর্ত ও প্রক্রিয়া গত ৩ মাসে আমরা সিরিয়াসভাবে লেখাপড়া করে জেনেছি ও দক্ষ হয়েছি। আরিফা মডেলের কারণে জিআই পণ্য নিয়ে কাজ করার টিম তৈরি হয়েছি। কেউ ফিল্ডে গিয়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে, কেউ ইতিহাস ও সাহিত্য পড়ে রেফারেন্স খোঁজে বের করছে, কেউ ইন্টারনেট সার্চ করে ঐতিহাসিক দলিল বের করছে আবার ইডিসি টিম জেলায় জেলায়ও গিয়েও জিআই পণ্য নিয়ে কাজ করছে। সবার সম্মিলিত কাজের মাধ্যমেই জিআই পণ্যের আবেদন পূর্ণতা লাভ করে। আমি মনে করি তা আমাদের জন্য টিম ওয়ার্ক, ভলান্টিয়ারি এবং মাতৃভূমীর জন্য কাজ। 

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের একটি পণ্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি রেফারেন্স হিসেবে ঐতিহাসিক দলিলও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর এই গ্রহণযোগ্য ঐতিহাসিক দলিলের জন্য ইতিহাস ও সাহিত্য সবচেয়ে মূল্যবান। সাহিত্যের মাধ্যমে যত সহজে রেফারেন্স পাওয়া যায় তত সহজে অন্যভাবে পাওয়া যায় না। ৫০, ১০০, ২০০ বছর আগের পত্রিকা-ম্যাগাজিন আমাদের সংগ্রহে নেই। যার কারণে পত্রিকা ম্যাগাজিনের রেফারেন্স খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। তবে সাহিত্যের মাধ্যমে ইতিহাসের বিভিন্ন স্থানে দেশি পণ্যের রেফারেন্স পাওয়া যায়।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিবার নিয়ে সিলেট ভ্রমণে এসে মণিপুরিদের হস্ত শিল্পে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তা আমরা জানতে পেরেছি ইতিহাস থেকে। রবীন্দ্রনাথের ”যজ্ঞেশ্বরের যজ্ঞ” নামক ছোট গল্পে নাটোরের কাঁচাগোল্লার কথা উল্লেখ করেছেন। সাহিত্যের এসব অংশ মণিপুরি বস্ত্র ও নাটোরের কাঁচাগোল্লা ইতিহাস প্রমাণ করে। তাই পণ্যের ইতিহাস খোঁজে পেতে সাহিত্যে আমরা নির্ভর করতে পারি।

আমি এখানে কেবল রবীন্দ্রনাথের কথা বলেছি। চর্যাপদ থেকে শুরু করে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় আমাদের নির্ভর করার সুযোগ রয়েছে। বাংলা সাহিত্যে প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ। সেখানেও আমরা বেগুন, হার, দুধ সহ অনেক দেশি পণ্যের উল্লেখ পাই। সাহিত্য পড়া নিয়ে আমাদের সামনে দারুণ উদাহরণ মোহাম্মদপুর টিম।

টিম হয়ে পড়ার কারণে অল্প সময়ে একেকটা সিরিজ শেষ হয়ে যায়। এর ফলে তাদের পোস্টগুলো পড়ার মাধ্যমে আমরা জেনে জাচ্ছি সাহিত্যের কোথায় কোথায় দেশি পণ্যের কথা উল্লেখ আছে। মোহাম্মদপুর টিম শুরু করেছে মুনতাসির মামুনের ঢাকার স্মৃতি দিয়ে। একইভাবে অন্যন্য গবেষণামূলক সিরিজ, রবীন্দ্রসাহিত্য, নজরুলসাহিত্য, বঙ্কিমসাহিত্য, শরৎ-সুকুমারসহ আঞ্চলিক সাহিত্যে গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সাহিত্য পড়তে আমাদের যেমন ভালো লাগে তেমনি দেশি পণ্যের তথ্য খুঁজে পেতেও ভালো লাগে। 

আজকের ইভেন্টে আমাকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করার জন্য মিরপুর এবং মোহাম্মদপুর টিমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে দেশি পণ্য জিআই পণ্য নিয়ে কাজ করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।

জিআই পণ্য ইতিহাস ও সাহিত্য ফটো গ্যালারী:

Scroll to Top