জিআই পণ্য ও খাবার
গত ৩০ মে ২০২৩ তারিখে রাজধানীর আদাবর ”ভূতের বাড়ি” রেস্টুরেন্টে জিআই পণ্য ও খাবার শীর্ষক ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আলিয়া’স কালেকশনের স্বত্বাধিকারী জেনিস ফারজানা তানিয়ার বক্তব্যের শ্রুতি লিখন:
আমাদের ৫টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাবার অন্যতম। ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য হলেও স্বাদ, পুষ্টি ও শরীরের চাহিদা পূরণের জন্য নানারকম খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক খাবার ও নিজেরা তৈরি কৃত খাবার। প্রাকৃতিক খাবারের মধ্যে ফলমূল, শাক-সবজি উল্লেখ যোগ্য। তবে আমি আজকে কথা বলতে চাই কারিগর দ্বারা উৎপাদিত খাবারগুলো নিয়ে।
আমাদের দেশে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত খাবার রয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার রসমালাই, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম, মুক্তাগাছার মন্ডা অন্যতম। ইতিমধ্যে এই খাবারগুলোর জিআই আবেদন সম্পন্ন হয়েছে। হয়তো আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যেই আমরা জিআই পণ্য হিসেবে এইসব পণ্যের স্বীকৃতি পেয়ে যাব। সবগুলো পণ্য উৎপাদন করা হয় স্থানীয় উৎস থেকে গরুর খাঁটি দুধ সংগ্রহ করে। এছাড়াও ময়দা, চিনিসহ প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো স্থানীয় বাজার থেকেই সংগ্রহ করা হয়। এর ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হয়েছে কর্মসংস্থান এবং জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেলে কর্মসংস্থানের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে।
আমরা লক্ষ্য করেছি নাটোরের কাঁচাগোল্লার জিআই আবেদনের সংবাদ অনলাইন ও অফলাইনে ১০০ এর মতো ছাপা হয়েছে। এরফলে অন্তত কয়েক লাখ মানুষ সংবাদটি জেনেছে। জিআই পণ্যের তালিকাভুক্ত হয়ে গেলে আরও অসংখ্য মিডিয়া কাভারেজ হবে এবং প্রচারণা বাড়বে। এর ফলে এই পণ্যগুলো চাহিদাও বাড়বে। চাহিদা পূরণের জন্য দরকার হবে উৎপাদন বাড়ানো। এর জন্য প্রয়োজন হবে দুধ, চিনি, ময়দা ও বাড়তি পরিশ্রম। স্বাভাবিকভাবেই দুধ উৎপাদন কারির আয় বাড়বে এবং তাদের জীবন মান উন্নত হবে।
মিষ্টি দোকানে নতুন কর্মী নিয়ে দিতে হবে। তাছাড়াও সারাদেশ বিশেষ করে ঢাকার শহরে বিক্রির জন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। তাদের কর্মসংস্থান হবে, যারা ডেলিভারি সাথে যুক্ত থাকবে তাদের আয় বাড়বে। এভাবেই জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার মাধ্যমে নিবিড়ভাবে আয় ও কর্মসংস্থান বাড়াতে ভূমিকা রাখবে আমাদের বিখ্যাত খাবারগুলো।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই খাবারগুলোতো ইতিমধ্যেই বিখ্যাত তাহলে এইভাবে কর্মসংস্থান এখুনি বাড়ছে না কেন? লক্ষ্য করলে দেখবেন অনেক খাবারের ক্ষেত্রেই এখন একটা দোকানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। যেমন কুমিল্লার রসমালাইর জন্য ’মাতৃভান্ডার’ এবং মুক্তাগাছার মন্ডার জন্য ’গোপাল পালের দোকান’। তারা নিজেদের দোকান ব্যতীত অনলাইনে বা অন্য কোথাও বিক্রি করে না। তাই এসব খাবারের চাহিদা ঢাকায় থাকলেও তা মিটছে না। কিন্তু জিআই পণ্য তো নির্দিষ্ট কোন দোকানের জন্য হচ্ছে না। তা হচ্ছে নির্দিষ্ট অঞ্চলের একটি খাবারে। তাই সেই অঞ্চলের অন্য দোকান দোকানগুলো এগিয়ে আসতে পারে ঢাকাসহ সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। তাই দ্রুত বেড়ে যাবে এসব খাবারের জাতীয় বাজার এবং তৈরি হবে চাহিদা পূরণের জন্য লোকবল।
চাহিদা তৈরি হলে তা পূরণের পথও তৈরি হয়। উদাহরণ দিয়ে ভারতের জিআই প্রাপ্ত জয়নগরের মোয়ার কথা বলতে পারি। এই মোয়া পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জয়নগর শহরে উৎপাদন হয়। সে অঞ্চলের বেশ বিখ্যাত একটি খাবার। এটি অবশ্য শীতকালীন খাবার। যা নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উৎপাদন হয়। সিজনে ২০০-২৫০ দোকানে জয়নগরের মোয়া উৎপাদন হয়। ধারনা মতো এসব দোকানে সব মিলিয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা। কিন্তু উইকিপিডিয়ার বলছে মোয়ার সাথে বর্তমানে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান জড়িয়ে আছে।
জিআই পণ্য ও খাবার ফটো গ্যালারী: