নেপালের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করা হবে এই আর্টিকেলে।
হিমালয়ের কন্যা নেপাল একটি ভূমিরূপ বিচিত্র দেশ। নেপালের সর্বত্র রয়েছে বৈচিত্র। এখানকার আবহাওয়া অবস্থা আর্দ্র। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১০টি পর্বতের ৮টি নেপালে। তাদের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম মাউন্ট এভারেস্ট। যা আমরা ছোটবেলা থেকেই জেনে আসছি। নেপালের সংস্কৃতিতেও রয়েছে হিন্দু আর বৌদ্ধ সংস্কৃতির মিশ্রণ। এছাড়া বহু দেশীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠির সংস্কৃতি সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আলাদা একটি সংস্কৃতি। তাদের পোশাক আশাক মুগ্ধ করে অন্যদের।
মজার বিষয় হলো গত কয়েকদিন আগে রাজিব আহমেদ স্যারের পোস্ট থেকে জানতে পেরেছি নেপালে ঢাকা টুপি, ঢাকা শাড়ি আর ঢাকা শাল জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত। অর্থাৎ বাংলাদেশের সাথে নেপালের একটা সম্পর্কে রয়েছে পোশাক পরিচ্ছেদে। এছাড়াও উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বন্ধুত্ব রয়েছে।
নেপালের অর্থনীতি
নেপালের অর্থনীতিতে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। দেশের ৬৫ ভাগ মানুষের কর্মসংস্থার কৃষির সাথে জড়িত। তারা মোট জিডিপিতে ৩১ শতাংশ অবদান রাখে কৃষি দিয়ে। আরেকটা তথ্য দেওয়া যেতে পারে, নেপালের কৃষকরা মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে আবাদ করতে পারে। ৪০ শতাংশ বনভূমি। ধান, গম এবং ভুট্ট তাদের প্রধান খাদ্য শস্য। এছাড়াও সবচেয়ে ভালো উৎপাদন হওয়া পণ্য ও পশুর মধ্যে আলু, আখ, মহিষ, ছাগল, ভেড়া উল্লেখযোগ্য।
কৃষি পণ্যের মধ্যে সালাদ ও মসলা জাতীয় পণ্যের উৎপাদন ভালো হয়। মসলা হিসেবে আদার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যেহেতু ইডিসি টিমের মধ্যে এখন আদা এখন আলোচিত বিষয়। আদার উৎপাদন, মান, সংরক্ষণ ও রপ্তানী বাড়াতে নেপালে নানা রকম উদ্যোগ রয়েছে। বিশ্বে আদা উৎপাদনে নেপালের অবস্থান চতুর্থ। ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২ লাখ ৯৭ হাজার টন আদা উৎপাদন হয়েছে নেপালে। বেশির ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে এটিকে তাদের স্থানীয় অর্থনীতির নতুন চালিকা শক্তি হিসেবে উল্লেখ করতে পারি। তবে নানাভাবে অর্থনৈতিক প্রবাহ বৃদ্ধি করার জন্য নেপাল সরকার ও জনগন প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
নেপালের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে প্রবাসী রেমিট্যান্স। বলতে পারি, নেপালের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে রেমিট্যান্স প্রভাব একটি পিলার। উইকিপিডিয়ার মতে, জিডিপির ৯.১ শতাংশ যোগান হয় রেমিট্যান্স থেকে। প্রবাসী অর্থ সহ বিদেশি শিক্ষার্থী, পর্যটক, বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানী সহ নানাভাবে ডলার আসে নেপালের অর্থনীতিতে। নেপালের রপ্তানী যোগ্য পণ্যের মধ্যে আপেল, নাশপাতি, টমেটো, মশলা, আলু, চাল, আদা অন্যতম। সম্প্রতি সময়ে জলবিদ্যুৎ রপ্তানীর মাত্রা বেড়েছে। এক মাস আগের বাংলা সংবাদপত্র থেকে জানতে পারি, “নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।” ৫০০ মেগাওয়াট আমদানিতে আগ্রহী বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ ছাড়াও নেপাল থেকে আদাও আমদানি করছে বাংলাদেশ। তবে নেপালের সবচেয়ে বড় রপ্তানীকারক দেশ ভারত।
নেপালের অর্থনীতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে পর্যটন। নেপালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ আসে প্রতি বছর। তাদের ব্যায় করা অর্থ নেপালের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। ‘সকল দর্শনীয় স্থানের রাজধানী’ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে পোখারার। এটি একটি শহরের নাম। পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষনীয় স্থান। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু পর্যটকদের জন্য অন্যতম পছন্দের জায়গা। ইউনেস্কোর ওর্য়াল্ড হেরিটেজ স্বীকৃত লুম্বিনি, নেপালি সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ভক্তপুর। এছাড়াও নাগরকোট, কন্যাম, ল্যাংট্যাং ভ্যালি ট্রেক, তিলিচো লেক, চিন্তাফু ট্রেক, পুন হিল ট্রেক, ইলম, জমসম, ধুলিখেল, অন্নপূর্ণা পর্যটক আকর্ষণের মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে।
নেপালের সম্ভাবনাময় খাতগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করতে পারি। নেপালের কৃষি, পরিবহন, পর্যটন ও জ্বালানী খাতে প্রচুর দেশি বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে দ্রুতই মধ্যম অর্থনীতির দেশের দিকে অগ্রসর হতে পারবে নেপাল। তবে কৃষির আরেকটা ছোট্ট অংশ নিয়ে বলতে চাই। যেহেতু গত এক বছর ধরে আমরা বাংলাদেশে জিআই পণ্য নিয়ে নিয়মিত কাজ করছি। আমার প্রোফাইল এবং পার্সোনাল ওয়েবসাইটে নিয়মিত জিআই পণ্য নিয়ে লিখছি। তাই জিআই পণ্য নিয়ে একটু আলোচনা করি।
নেপাল কৃষি প্রধান দেশ হলেও সেখানে এখনো জিআই পণ্য নেই। তাদের মাঝে হয়তো জিআই পণ্য নিয়ে সচেতনতাও নেই। আমি গতকাল ইন্টারনেট সার্চ করে দেখলাম ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপ্রার্টি অর্থাৎ যারা জিআই স্বীকৃতি কর্তৃপক্ষ তাদের কোন একটিভিটি নেই। থাকলেও ইন্টারনেটে তথ্য নেই। তাই হয়তো পাইনি। আদার মতো অসংখ্য পণ্য জিআই এর জন্য মনোনিত হতে পারে নেপালে। যা নিজস্ব পরিচিতি বাড়াবে। পর্যটকদের কাছে মার্কেট তৈরি করবে এবং রপ্তানীর সুযোগ কে বৃদ্ধি করবে। এর ফলে নেপালের ব্র্যান্ডিং বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
সূত্র: