ময়মনসিংহের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

ময়মনসিংহের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তর জেলাগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ অন্যতম। কোম্পানী আমলে গঠিত হয়েছিল ময়মনসিংহ তথা তৎকালীন মোমেনশাহী। ২’শ বছর আগে থেকে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার মন্ডা খ্যাতি ছাড়ায় সর্বত্র। এ ছাড়াও বিরই চালের সুনাম মুখে মুখে বহুকাল ধরে। দেশে হু হু করে বাড়ছে জিআই পণ্যের সংখ্যা। এর মধ্যে নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে মুক্তাগাছার মন্ডা। আজকে আলোচনা করবো ময়মনসিংহের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

বিরই চাল
ময়মনসিংহের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

বিরই চাল

ময়মনসিংহের প্রাচীন পণ্যের মধ্যে বিরই চাল অন্যতম। এর উল্লেখ পাওয়া যায় পুরাতন বই পত্রে। ময়মনসিংহ গীতিকায়ও বিরই চালের কথা উল্লেখ আছে। এটি বিলুপ্তির পর্যায়ে চলে গেলেও জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে বিরই চাল নিয়ে সকলের মাঝে উৎসাহ তৈরি করা যেতে পারে। একটি প্রাচীন জাতের ধান এই প্রজন্ম এবং আগামীর প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে জিআই স্বীকৃতি। বলা যায় বিরই চাল অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ হয়ে থাকে। তাই শহরবাসীর কাছে কদর বাড়ানোর সুযোগ আছে। এটি একটা সময় হয়ে উঠতে পারে ময়মনসিংহে ব্র্যান্ডিং এর অংশ।

লাফা বেগুন বা তাল বেগুন

সারাদেশে বেগুন একটি খুবই পরিচিত এবং জনপ্রিয় সজবি হলেও লাফা বেগুনের জন্য বিখ্যাত ময়মনসিংহের গফরগাঁও। ময়নসিংহে বেগুনের চাষ প্রাচীন ও জনপ্রিয় হওয়ার কারণে তৎকালীন সময়ে একটি স্থানের নাম হয়ে যায় বাইগুনবাড়ি। ময়মনসিংহ বেগুনের জন্য বিখ্যাত হওয়ার এটিই ইতিহাসের বড় দলীল। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় উৎপাদন হওয়া লাফা বেগুনের স্বাদ স্বতন্ত্র। প্রাচীন বই পুস্তকে পাওয়া যায় এই বেগুনের রেফারেন্স। তাই কৃষি পণ্য ক্যাটাগরিতে বেগুনের জিআই স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করা যেতে পারে। এতে করে ব্র্যান্ডিং ও কদর বাড়বে ময়মনসিংহের লাফা বেগুনের। পরবর্তীতে এই বেগুনের সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নিলে সরাসরি গ্রামীণ জনগোষ্ঠী উকৃত হবে।

ময়মনসিংহের মালাইকারি
মালাইকারি ময়মনসিংহের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

ময়মনসিংহের মালাইকারি

ময়মনসিংহের মালাইকারি মিষ্টির স্বাদ অন্য যেকোন মিষ্টির চেয়ে আলাদা। এই মিষ্টির উৎপত্তি ময়মনসিংহ শহরেই। স্বাদ আর বৈশিষ্ট্যের কারণে খুব দ্রুতই ছড়িয়ে যায় মালাইকারির পরিচিতি ও সুনাম। এটি ময়মনসিংহের ঐতিহ্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে সহ প্রবাসীদের মাধ্যমে যায় বিদেশে মালাইকারি। মুক্তাগাছার মন্ডার পথ ধরে জিআই স্বীকৃতি অর্জন করতে পারে ময়মনসিংহের মালাইকারি।

গৌরিপুরের চল্লিশা আলু

সারাদেশে আলু উৎপাদন হলেও ময়মনসিংহের গৌরিপুর ব্যাতীত চল্লিশা আলুর উৎপাদনের খবর পাওয়া যায় না। এই আলু অন্য যেকোন গোল আলুর চেয়ে স্বতন্ত্র। মাত্র ৪০ দিনে উৎপাদন হয় এই আলু যার কারণে নামকরণ করা হয়েছে চল্লিশা আলু। গৌরিপুরের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে চল্লিশা আলু। তাই দেশের জিআই পণ্যের মর্যাদা পেতে পারে গৌরিপুরের চল্লিশা আলু।

হালুয়াঘাটের গামছা শার্ট
হালুয়াঘাটের গামছা ময়মনসিংহের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

হালুয়াঘাটের গামছা

সম্পূর্ণ ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে হালুয়াঘাটের গামছা। এই গামছা কেবল হাত মুচা কাজেই নয় তা দিয়ে তৈরি করা যায় নানারকম বস্ত্র। এর মধ্যে শার্ট অন্যতম। হালুয়াঘাটের গামছা শার্ট শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সহ সব ঋতুতে আরামদায়ক। এছাড়াও নারীদের ব্লাউজ, মেয়েদের জামাসহ নানা কিছু তৈরি করা হয়।

গামছা বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। এ দেশের প্রায় সব শ্রেণির মানুষ গামছা ব্যবহার করে থাকেন। হালুয়াঘাটের গামছা উৎপাদনের সাথে জড়িয়ে আছে প্রান্তিক তাঁতি গোষ্ঠী। তাদের অধিকাংশই আদিবাসী জনগোষ্ঠী। এই গামছা জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে হালুয়াগাটের ব্র্যান্ডিং বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

Leave a Reply

Scroll to Top