দেশি পণ্যের ই-কমার্স এবং ক্যারিয়ার
গত ১১ মে ২০২৩ তারিখে ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি)-এর আয়োজনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে দেশি পণ্যের ই-কমার্স এবং ক্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আব্দুল ওয়াদুদ। প্রধান অতিথি ছিলেন রাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াস হোসাইন, বিশেষ অতিথি ছিলেন ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি)-এর প্রেসিডেন্ট কাকলী তালুকদার ও আলিয়া’স কালেকশনের স্বত্বাধিকারী জেনিস ফারজানা তানিয়া।
বিশেষ অতিথি জেনিস তানিয়ার বক্তব্যের শ্রুতি লিখন:
বর্তমানে ই-কমার্স সকলের কাছে সুপরিচিত একটি সেক্টর। এর সুফলও এখন সর্বত্র। ই-কমার্সের সাথে তরুণ প্রজন্মের পরিচিতি আগে থেকে থাকলেও সব শ্রেণি মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছে মহামারী করোনার সময়। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব স্থানে এখন ই-কমার্স নিয়ে আলোচনা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ই-কমার্সের উপর আলাদা ক্লাব গঠনের লক্ষ্যের আমরা কাজ করছি। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে ইতিমধ্যে ক্লাব গঠন হয়েছে ই-কমার্সের উপর। তাদের কার্যক্রমও সংবাদপ্রত্রের মাধ্যমে দেশবাসী জানার সুযোগ পাচ্ছে। ই-কমার্সের প্রায় শতভাগ লোক শিক্ষিত। এটি শিক্ষিত লোকের ইন্ডাস্ট্রি। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-কমার্সের উপর লেখাপড়া জোরালো করা গুরুত্ব দেখা দিয়েছে। এটি বিহৎ একটি সেক্টর এবং দিনে দিনে কর্মের চাহিদা বাড়বে।
ই-কমার্স খাতে ক্যারিয়ার গড়ার কথা শুনলেই এখনো অনেকের মাথায় আসে কেবল উদ্যোক্তা হয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হয়। এর বাহিরেও বিভিন্নভাবে কাজের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ফটোগ্রাফি, কনটেন্ট রাইটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, কাস্টমার সার্ভিস, ডিজিটাল মার্কেটিং, মডেলিং, ডেলিভারি, অ্যাকাউন্ট, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টসহ অসংখ্য ডিপার্টমেন্ট। তবে যেহেতু ই-কমার্স নতুন একটি খাত। এবং আগামী কয়েকদশক ধরে উদ্যোগ বাড়তে থাকবে। তাই প্রোডাক্ট সোর্সিং একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের দেশে এখনো উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে গেছে। এর মধ্যে পারিবারিকভাবে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত না করা, অর্থ যোগান, ই-কমার্সের উপর লেখাপড়ার সুযোগ না থাকা ইত্যাদি।
যেহেতু অবস্থা রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয় তাই অল্প মূলধন দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন নিজেকে দক্ষ গড়ে তোলা। আর দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করা। প্রাকৃতিগতভাবে আমাদের মাটি, আবহাওয়া, জলবায়ুর কারণে দেশে নানা ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়। এমনকি প্রত্যেক জেলার পণ্যের আলাদার বিশেষত্ব রয়েছে।
৩০০ বছর আগে থেকেই প্রমাণিত আমাদের দেশি পণ্য গুণেমানে সেরা। এ কারণে মসলিন, জামদানি, পাটের মতো পণ্যগুলো বিশ্ব কাপিয়েছে এবং আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। এখনো তৈরি পোশাক খাতে বিশ্বের আমাদের অবস্থান অন্যতম। তাছাড়াও আমাদের চারপাশে যেসব পণ্য আমাদের কৃষক, তাঁতি, কারিগর দ্বারা তৈরি হয় তা গুণেমানে অনন্য হওয়ার কারণেই শতাব্দির পর শতাব্দির ধরে উৎপাদন হয়, এসব পণ্যের প্রতি আমাদের ইমোশন কাজ করে। খাবার পোশাক যাই বলি না কেন। বিদেশি পণ্য খেয়ে বা ব্যবহার করে এবং দেশি পণ্য খেয়ে ও ব্যবহার করে পার্থক্য বুঝে যাবেন আসলে কোনটা বেশি ভালো লাগে।
এসব পণ্য নিয়ে উদ্যোগ শুরু করতে চাইলে বেশি মূলধন প্রয়োজন হয় না। যেহেতু পণ্যগুলো আমাদের চারপাশে উৎপাদন হয় তাই স্টক করারও প্রয়োজন হয়। অর্ডার পাওয়ার পর তা সংগ্রহ করে পৌঁছে দেওয়া যায়। এসব পণ্যের মান নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতা সবাই অবগত তাই বেশি মার্কেটিং না করলেও চলে।
দেশি পণ্যকে কেন্দ্র করে নানাভাবে ক্যারিয়ার গড়া যায়। আপনারা জানেন ক্রেতা বিক্রেতার মাঝে লেনদেন হয় পণ্যের ছবি দেখার মাধ্যমে। তাই ভালো ছবির জন্য প্রফেশনাল লোকের প্রয়োজন হয়, মডেল দরকার হয়। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে নিতে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। এতসব কাজ একজন উদ্যোক্তার পক্ষে করা সম্ভব হয় না। তাই প্রয়োজন হলো দক্ষজনবল নিয়োগ দেওয়ার।
আমি আলোচনার একদম শেষ প্রান্তে আছি। সর্বশেষ বলব আপনারা প্রতিদিন মাত্র ১ ঘন্টা করে সময় দিয়ে ই-কমার্স নিয়ে জানাশোনা করুন, উদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের পোস্টগুলো পড়ুন তাহলে বুঝতে পারবেন কোন কোন বিষয়ে দক্ষতা থাকলে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ যোগাড় করা সহজ হবে। পোস্ট কমেন্টের মাধ্যমে পরিচিতিও গড়ে উঠবে। যা কাজ পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আরা যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তারাও বিভিন্ন ধাপ নিয়ে জানতে পারবে। তাই পরবর্তীতের উদ্যোগ গ্রহণের পূর্বেই নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারবেন।
সকলের সার্বিক সাফল্য কামনা করে আমার বক্তব্য এখানে শেষ করছি।